সারা দিন কাজ ও নানা রকম চাপের কারণে অনেকে চার-পাঁচ ঘণ্টা কিংবা ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকেন। এই ঘুমকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দিনে অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টা না ঘুমালে চিকিৎসাশাস্ত্রে তা পর্যাপ্ত ঘুম নয়। আর পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
কম ঘুমালে ঠিক কি কি ক্ষতি হতে পারে, আসুন তা জেনে নেই এই প্রতিবেদন থেকে-
হতাশাগ্রস্ত হওয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম ঘুম সবচেয়ে আগে প্রভাব ফেলে মনে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমের ফলে হতাশায় ডুবে যেতে পারে যেকোনো মানুষ।
বয়স বাড়বে
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বেড়ে যায় ত্বকের বয়স। শুনতে অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি। ঘুম ঠিকমত না হলে কর্টিসল নামে হরমোনের ক্ষরণ যায় বেড়ে। এটি নষ্ট করে দেয় ত্বকের কোলাজেনকে। এদিকে কোলাজেনের কাজ হলো ত্বকের টানটান বাঁধন ধরে রাখা। তাই কোলাজেন নষ্ট হয়ে গেলে ত্বকের যৌবনও আর থাকে না। শুধু তাই নয়, চোখের নিচে কালি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডার্ক সার্কেলের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
শারীরিক সম্পর্কে অনিহা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম ঘুমের ফলে শরীরে সেক্স হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকে। শুধু তাই নয়, কমে যায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হরমোন। এটি কমিয়ে দেয় শারীরিক সম্পর্ক করার ইচ্ছাও।
হৃদরোগের ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কম ঘুম বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের সম্ভাবনা। কম ঘুম হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটায়। দীর্ঘদিন কম সময় ঘুমালে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তো কমেই না বরং হার্ট ফেইলিওরও হতে পারে। এ ছাড়া ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিসের মতো বিপজ্জনক রোগগুলোও আপনার শরীরে বসবাস করবে।
স্থুলতা
লোকে বলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মোটা হচ্ছে। অথচ কম ঘুমানো সত্ত্বেও আপনি আগের তুলনায় মোটা হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর জন্য দায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। পর্যাপ্ত না ঘুমালে খিদে বেশি পায়, এমনটাও দেখা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। বেশি খাচ্ছেন অথচ কম ঘুমের জন্য বিএমআর রেট সঠিক নয়। ফলে শরীরে জমছে অতিরিক্ত ফ্যাট, যা ওবেসিটিতে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
মস্তিষ্ককে যেমন চূড়ান্ত খাটিয়ে নেওয়া যায়, তেমনই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার বিশ্রামও দরকার। নয়তো সে ধীরে ধীরে হারাতে থাকে বিভিন্ন ভাগের শক্তিগুলো। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে মস্তিষ্কের স্মৃতির অংশটি দুর্বল হতে থাকে যা ভুলিয়ে দিতে থাকে আপনার অতি প্রয়োজনীয় ঘটনা বা কথাগুলোও।
দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ায়
কম ঘুমের ফলে মস্তিষ্ক ঠিকঠাক নির্দেশ দেওয়া-নেওয়া করতে পারে না। ফলে যা করতে চান, তা না হয়ে অন্য একটা ভুল কাজ হয়ে যায়। এই সমস্যা অত্যন্ত বিপদের। যেমন রাস্তায় বেরিয়ে ঠিকঠাক গাড়ি চালাতে গেলেও মস্তিষ্কের ভুলের জন্য হয়ে যেতে পারে বড় রকমের ভুল। কম ঘুমিয়ে হয়তো অনেক কাজ সেরে ফেলা যায়। কিন্তু তাতে শরীরের প্রতি অন্যায় করা হয়। শরীর ঠিক না থাকলে কাজগুলোই বা তখন হবে কী করে। তাই সবার আগে নজর দিন নিজের শরীরে।